রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিআরটিসির দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে

বিআরটিসির দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে

স্বদেশ ডেস্ক: গত ১০ বছরে বিআরটিসিকে দেড় হাজারের বেশি বাস-ট্রাক সরকার কিনে দিলেও প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেনি। সংস্থাটির ৩৮ শতাংশ বাস বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। নতুন কেনা বাসগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও দুর্নীতির নতুন নতুন অভিযোগ আসতে শুরু হয়েছে। অথচ করপোরেশনের বিভিন্ন ডিপোয় শ্রমিক-কর্মচারীদের কয়েক মাস করে বেতন বকেয়া। শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া বেতনের দাবিতে গত এক বছরে দুবার জোয়ারসাহারা ডিপোতে তালা দেয়। সম্প্রতি বিক্ষোভ হয় নারায়ণগঞ্জ ডিপোতেও।

অভিযোগ এসেছে, অর্থ আত্মসাতের দায়ে গুরুদণ্ড পাওয়া কর্মকর্তার সাজা লঘু করা হয়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তিন কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার। সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলছে বিআরটিসির জমি ইজারার উদ্যোগ। বকেয়া পরিশোধের নামে ‘মীমাংসা’র প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বদলির আদেশের পরও পদ ধরে রাখতে সময় চাওয়া হয়েছে। এ রকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয়ে গিয়েও নালিশ করা হচ্ছে এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তিনি দায়িত্ব না ছেড়ে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রামের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিককে নিয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে যান মন্ত্রণালয়ে। সিএনজি স্টেশনের এক

মালিক সচিবালয়ে জানান, তিনি বিআরটিসির জমি ইজারা নিয়েছেন। ইজারা বাবদ তার কাছে বিআরটিসির পাওনা এক কোটি সাত লাখ টাকা। বিআরটিসি চেয়ারম্যান তাকে খবর পাঠিয়েছেন ‘দেখা’ না করলে জমির ইজারা বাতিল করবেন। তার দাবি, ঘুষ আদায় করতে তাকে দেখা করতে বলা হচ্ছে। এ অভিযোগের জবাবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া গতকাল শনিবার বিকালে আমাদের সময়কে বলেছেন অভিযোগটি সঠিক নয়।

সূত্রের খবর, রংপুর ডিপোতে কর্মরত অবস্থায় অর্থ আত্মসাতের দায়ে মাসুদ আলমকে প্রথম শ্রেণির পদ ট্রাফিক অফিসার থেকে ডিমোশন দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পদ সহকারী ট্রাফিক অফিসার করা হয়। বিআরটিসির অভ্যন্তরীণ তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হয়েছিলেন। তার সাজা পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণ করে ফরিদ আহমদ পুনঃতদন্ত করান। এতে মাসুদ আলম দোষী প্রমাণিত হন।

সূত্রমতে, ফরিদ আহমদের বদলির আদেশের পর মাসুদ আলমের সাজা কমানো হয়। ডিমোশনের বদলে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার করা হয়! গত ২৭ আগস্ট ফারিদ আহমদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘গুরুদণ্ডের পরিবর্তে প্রবিধানমালার ৪০ (ক)-এর (অ) বিধান মোতাবেক তিরস্কার দণ্ড প্রদান করা হলো।’

এ ছাড়া তিন কর্মকর্তাকে অনিয়মের দায় থেকে বিদায়বেলা নিষ্কৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কুমিল্লা ডিপোতে দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়মের অভিযোগে সাজা দেওয়া হয় বর্তমানে মতিঝিল ডিপো ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা নায়েব আলী, যাত্রাবাড়ী বাস ডিপোর ম্যানেজার মাসুদ তালুকদার এবং গাজীপুর বাস ডিপোর ম্যানেজার জিয়াউর রহমানকে। ডিপোতে বকেয়া রাখা এবং ট্রিপের টাকা জমা না দেওয়ার দায়ে সড়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্তে তাদের দায়ী করা হয়। দণ্ডের কারণে এই তিন কর্মকর্তা পদোন্নতির বিবেচনায় আসতে পারতেন না। কিন্তু অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ায় তাদের পদোন্নতি পেতে আর বাধা রইল না।

বিআরটিসির অপারেশন শাখা জানিয়েছে, ভারতীয় ঋণে ৩৯৭টি বাস আনা হয়েছে। মোট আসবে ৬শটি। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটার সরবরাহ করা ১০০ নন-এসি বাসে আমদানির প্রথম মাসেই ত্রুটি ধরা পড়ে। রাস্তায় নামার আগেই কয়েকটি বাসে ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ে। নতুন বাসের ২৩৩টি বিভিন্ন ডিপোয় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৬৪টি বসিয়ে রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নিবন্ধন সম্পন্ন না হওয়ার অজুহাতে দুই মাস ধরে বাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আসলে নিবন্ধন নয়, মূলত ‘অতিরিক্ত’ টাকা ছাড়া বাস দেওয়া হচ্ছে না-এমন অভিযোগের জনশ্রুতি রয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তার কাছে খবর রয়েছে বিআরটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করে প্রতিষ্ঠানকে লোকসানি করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিএনজি স্টেশন করতে জমি বরাদ্দ না দিতে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করে বিআরটিসির কল্যাণপুর ডিপোর ৮ হাজার ৭৩৪ বর্গফুট ইজারা দেওয়া জমিতে সিএনজি কাম পেট্রোল পাম্প চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ১৬ জুলাই কমিটি গঠন করে বিআরটিসি। বর্তমান চেয়ারম্যানের বদলি আদেশের পর এ প্রক্রিয়ার গতি বেড়েছে। ডাকা হয়েছে এ সংক্রান্ত বৈঠক।

নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ফরিদ আহমদ বলেন, ‘দায়িত্ব পালন করায় অনেকে মিথ্যা অভিযোগ তুলতে পারে। নতুন আদেশপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত রুটিন ওয়ার্ক করছি। কোথাও কোনো অনিয়মে জড়িত নই।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এহছানে এলাহীকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান পদে বদলি করা হয়। তিনি এখনো যোগ দেননি। ৫ তারিখ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় চেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ।

এর আগে ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে বদলি করা হয় অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আহমদকে। এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ মো. দস্তগীরকে বদলি করা হয় বিআরটিসির চেয়ারম্যান পদে। কিন্তু তিনি এ পদে যোগ দেননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877